বাংলাদেশের প্রথম সাইকোলজিক্যাল কেস কনফারেন্সে বক্তারা দেশীয় সাংস্কৃতিক আবহে বিজ্ঞানভিত্তিক মানসিক চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। গতকাল শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি ২০২৫) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরসি মজুমদার মিলনায়তনে এই কনফারেন্স আয়োজন করে ঢাবি’র এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ এবং বাংলাদেশ এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি সোস্যাইটি (বিইসিপিএস)। কনফারেন্সে প্রায় ২০০ জন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ছিলেন মনোবিজ্ঞানী, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সমাজকর্মী, চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট পেশার শিক্ষানবিশরা। কনফারেন্স উদ্বোধন করেন ঢাবি’র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ড. মামুন আহমেদ। এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের প্রধান ড. আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনীতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এনামুল হক এবং বাংলাদেশের প্রাচীনতম মনোবিজ্ঞান জার্নাল বাংলাদেশ সাইকোলজিক্যাল স্টাডিজ-এর সম্পাদক অধ্যাপক হামিদা আখতার বেগম।
কনফারেন্সে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার চ্যালেঞ্জ এবং বাংলাদেশি মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন থেরাপিউটিক পদ্ধতির উপর আলোকপাত করা হয়। নির্বাচিত আটটি ভিন্ন ভিন্ন কেস উপস্থাপনার মাধ্যমে বৈবাহিক সমস্যা, শৈশবের মানসিক ট্রমা, বুলিং, আতঙ্কজনিত ব্যাধি, নিজেই নিজের ক্ষতি করা এবং মনোযৌন সমস্যার মতো জটিল বিষয় আলোচিত হয়। এসব কেস থেকে দেখা যায় সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল এবং বিজ্ঞানভিত্তিক থেরাপি কীভাবে একজনকে সুস্থ হতে সহায়তা করছে।
একটি কেসে দেখা যায়, বিরল শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক থেরাপি এবং ঔষুধের সমন্বিত প্রয়োগে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। ট্রমা ফোকাসড থেরাপি, যেমন ইএমডিআর (Eye Movement Desensitization and Reprocessing) এবং নিউরো-লিংগুইস্টিক প্রোগ্রামিং (NLP), ব্যবহার করে গভীর আবেগজনিত ক্ষত নিরাময়ের কার্যকারিতাও তুলে ধরা হয়। সৃজনশীল থেরাপি কৌশলগুলোর উপরও কনফারেন্সে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর্ট থেরাপি, কল্পনাশক্তি ব্যবহার এবং সেন্সরি গ্রাউন্ডিং টুলসের মতো পদ্ধতি বুলিং এবং ট্রমার সাথে লড়াই করা তরুণদের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। পারিবারিক কাউন্সেলিং বৈবাহিক কলহ নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে উল্লেখ করা হয়।
থেরাপির সাফল্য নিশ্চিত করতে থেরাপিস্টের নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং সুপারভিশনের গুরুত্বও আলোচিত হয়। এ ছাড়া বক্তারা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সকলের জন্য আরও সহজলভ্য ও ন্যায়সঙ্গত করতে গবেষণা, সহযোগিতা এবং অ্যাডভোকেসির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।