ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফারসি বিষয়ের প্রাক্তনীদের ঐতিহ্যের ধারায় ড. আবেদা হাফিজের নাম স্মরণীয়। কোলকাতার বেবুন মহিলা কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে ড. আবেদা হাফিজের কর্মজীবনের সূচনা। তার জন্ম কোলকাতার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি নিয়ে কাবুসনামে গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন। তার এই অনুবাদকর্মে তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি অধ্যাপক এবং কোলকাতা ইরান সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ড. মোহাম্মদ ইসহাক। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর তিনি তদানিন্তন পূর্ব-পাকিস্তানে চলে আসেন এবং ইডেন মহিলা কলেজে ফারসি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সী ও উর্দু বিভাগের তদানীন্তন চেয়ারম্যান ড. আন্দালিব শাদানির তত্ত্বাবধানে তারিখে শাহ্ শুজায়ির সম্পাদনা ও ইংরেজি অনুবাদ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ফারসি গবেষক ও ঐতিহাসিক মুহাম্মদ মাসুম বিন হাসান বিন সালেহ ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে ফারসি ভাষায় তারিখে শাহ্ শুজায়ি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থটি সম্রাট শাহ্জাহানের পুত্র শাহ শুজার রাজদরবারের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ। ড. আবেদা হাফিজ তারিখে শাহশুজায়ি’র মূল ফারসি পাণ্ডলিপি অন্যান্য পাণ্ডলিপির সাথে তুলনা করে প্রয়োজনীয় সম্পাদনা ও টীকাভাষ্য সংযোজন করেন এবং এর ইংরেজি অনুবাদ করেন। ইংরেজি অনুবাদের সূচনায় গ্রন্থের মূল লেখক মুহাম্মদ মাসুম বিন হাসান বিন সালেহ-র জীবন পরিক্রমা সবিস্তারে উল্লেখ করেন। ড. আবেদা হাফিজের অপর এক অবদান ফারসি উচ্চারণে বাংলা-ফারসি অভিধান, যা তিনি সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি (খান, ২০১৭: ১৩৫-৬)। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জনকারীর জন্য ড. আবেদা হাফিজ স্বর্ণপদকের প্রচলন করেন।