‘মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি’- এই অমর পঙ্ক্তির রচয়িতা কবি মুহাম্মদ সামাদ মুজিববর্ষে পেলেন কবিতায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। ১৯৭৫-এ জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সেই অবরুদ্ধ ভয়ের সময়ে সারা দেশের দেয়ালে-পোস্টারে-মে র ব্যানারে খঁচিত হয়ে বাঙালি জাতিকে সাহস যুগিয়েছে ও উদ্দীপিত করেছে এই উজ্জ্বল কাব্যপঙ্ক্তিটি।
পেশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবি ড. মুহাম্মদ সামাদের জন্ম তৎকালীন ময়মনসিংহের জামালপুর মহকুমায় ১৯৫৬ সালে। ড. মুহাম্মদ সামাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের উইনোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে ২০০৫ এবং ২০০৯ সালে পর-পর দুইবার পাঠদান করে সুনাম অর্জন করেছেন। ২০০৯ সালে সমাজকর্ম শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ওয়াশিংটনস্থ সিএসডবিউই পরিচালিত ‘ক্যাথেরিন ক্যান্ডাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল ওয়ার্ক এডুকেশন’-এর ফেলো হিসেবে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্মের উচ্চশিক্ষার তুলনামূলক অবস্থার ওপর গবেষণা করেন। টোকিওর ‘জাপান কলেজ অব সোশ্যাল ওয়ার্ক’ গবেষণা ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস)’-এর উপাচার্যের দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মুহাম্মদ সামাদ বাংলা ভাষা-সাহিত্যের একজন প্রতিভাবান ও জনপ্রিয় কবি। কবিতা লিখেন স্কুল জীবন থেকে। দেশের একজন বিশিষ্ট কবি এবং ধীমান অধ্যাপক, উন্নয়ন-গবেষক ও সামাজিক বিজ্ঞানী হিসেবে মুহাম্মদ সামাদের খ্যাতি ঈর্ষণীয়। এখন পর্যন্ত কবিতা, কাব্যানুবাদ ও সমাজচিন্তা মিলিয়ে তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসংখ্যা ২৩টি। কাব্যগ্রন্থ: আমি তোমাদের কবি (২০১৯); আমার দুচোখ জলে ভরে যায় (২০১২); আজ শরতের আকাশে পূর্ণিমা (২০০৫); চলো, তুমুল বৃষ্টিতে ভিজি (১৯৯৬); পোড়াবে চন্দন কাঠ (১৯৮৯); আমি নই ইন্দ্রজিৎ মেঘের আড়ালে (১৯৮৫); একজন রাজনৈতিক নেতার মেনিফেস্টো (১৯৮৩) ০৮. কবিতাসংগ্রহ (২০০০); প্রেমের কবিতা (২০০৮); উৎসবের কবিতা ([সম্পাদিত] (১৯৯৬); ত্রিপুরার বাংলা কবিতা (সম্পাদনা: সেলিনা হোসেন ও মুহাম্মদ সামাদ; ২০১৬); সিলেক্টেড পোয়েমস্ Selected Poems (Edited by Kajal Bondyopadhyay, 2008; Second Edition; 2012)। অনূদিত কাব্যগ্রন্থ: সাত দেশের কবিতা (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, সুইডেন, সার্বিয়া, জর্জিয়া ও ভিয়েতনাম; সিটি আনন্দ-আলো পুরস্কারপ্রাপ্ত; ২০১৯); ট্রান্সট্রয়মারের কবিতা (মুহাম্মদ সামাদ এবং আনিসুর রহমান; ২০১৯)। উল্লেখযোগ্য গবেষণাগ্রন্থ: সোশ্যাল সার্ভিস অ্যাটিভিটিজ অব রিলিজিয়াস ইনস্টিটিউট ইন বাংলাদেশ (Social Service Activities of Religious Institutions in Bangladesh); পার্টিসিপেশন অব দি রুরাল পুয়োর ইন গভর্নমেন্ট অ্যান্ড এনজিও প্রোগ্রামস্ ইন বাংলাদেশ (Participation of the Rural Poor in Government and
NGO Programs in Bangladesh); এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত দি ইনভিজিবল পিপল: পোভার্টি অ্যান্ড রেজিলিয়েসি ইন ঢাকা স্লামস (The Invisible People: Poverty and Resiliency in the Dhaka Slums) প্রভৃতি। কবি মুহাম্মদ সামাদ-এর কবিতা ইংরেজি, সুইডিশ, ইতালিয়ান, গ্রিক, চীনা, সার্বিয়ান, হিন্দি, সিনহালি প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
ড. মুহাম্মদ সামাদ সিটি আনন্দ-আলো পুরস্কার, সৈয়দ মুজতবা আলী সাহিত্য পুরস্কার, কবি সুকান্ত সাহিত্য পুরস্কার, কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার, কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, ত্রিভূজ সাহিত্য পুরস্কার, কবি বিষ্ণু দে পুরস্কার [২০০৯, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত], কবিতালাপ পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া চীনের ইন্টান্যাশনাল পোয়েট্রি ট্র্যানস্লেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (International Poetry Translation
and Research Centre) কর্তৃক ঘোষিত বিশ্বের ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রাইজেস ২০১৮: ইন্টান্যাশনাল বেস্ট পোয়েট (Prizes 2018: International Best Poet) সম্মাননা লাভ করেন। অন্য নয়টি দেশের কবিরা হলেন রুমানিয়ার ড্রাগুস বারবু (Dragos Barbu), তুরস্কের হিলাল কারাহান (Dragos Barbu), মেসিডোনিয়ার মাইট স্টেফস্কি (Mite Stefoski), কাতালুনিয়া-স্পেনের তোনিয়া প্যাসোলা (Tonia Passola), সৌদি আরবের আলী আল-হাজমি (Ali Al-Hazmi), ভারতের মণ্ডল বিজয় বেগ (Mandal Bijoy Beg), আলবেনিয়ার ফাতিমি কুল্লি (Fatime Kulli), চীনের দুয়ান গুয়াঙ্গা’আন (Duan Guang'an) এবং বেলজিয়ামের ডমিনিক হেক (Dominique Hecq)।
একজন কবি ও শিক্ষক-গবেষক হিসেবে ড. মুহাম্মদ সামাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ইতালি, ভ্যাটিক্যান সিটি, গ্রিস, তুরস্ক, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম সফর করেন। মুহাম্মদ সামাদ বর্তমানে বাংলাদেশের কবিদের প্রধান প্রতিষ্ঠান জাতীয় কবিতা পরিষদ-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
--------------------
(মাহমুদ আলম)
পরিচালক
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়