গত ২১শে মার্চ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হয় বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস ২০২১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের উদ্যোগে ডাউন সিনড্রোম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষদের জন্য গতকাল গুরুত্বপূর্ণ এই দিবসটি পালিত হয়েছে। মহামারী করোনা সংকট বিবেচনায় গতানুগতিক অনুষ্ঠান পদ্ধতির পরিবর্তন করে ঐদিন বিকেল পাঁচটায় আয়োজিত হয় একটি অনলাইন ওয়েবিনার। উক্ত ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারপার্সন তাওহিদা জাহান, ডাউন সিনড্রোম সোসাইটি অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সরদার আব্দুর রাজ্জাক এবং জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সরদার এ নাইম। আরও উপস্থিত ছিলে বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ এবং সহকারি অধ্যাপক সোনিয়া ইসলাম নিশা।
ওয়েবিনারটির সূচনায় ছিলো দেশাত্মবোধক গানের সাথে ডাউন সিনড্রোম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশু রাফান এবং প্রত্যাশার নাচ। ওয়েবিনারটির পরবর্তী অংশ ছিলো অতিথিদের আলোচনা পর্ব। শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় প্রো উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল তাঁর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাতে তুলে ধরেন, ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তিরা সমাজে নিগৃহীত ছিলো কিন্তু বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস পালনের মত সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এসকল ব্যক্তিদের অধিকার, সম্মান-মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান দিন দিন উন্নত হচ্ছে। এসকল কর্মকাণ্ডে কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের অবদান ও ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদেরকে মূলধারার নিয়ে আসতে চিকিৎসাগত, শিক্ষাগত ও সচেতনতামূলক নানা কর্মকাণ্ডে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এ বিভাগটির অবদান অনস্বীকার্য। বিভাগটির উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি ক্লিনিক্যাল ল্যাব প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেন। তিনি তার আলোচনায় বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক এবং সকল শ্রেণির কর্মচারীদের সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মাননীয় ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ডাউন সিনড্রোম বিষয়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনা প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে চিকিৎসক ও শিক্ষকসহ সমাজের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। ডাউন সিনড্রোমসহ অন্যান্য বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানও তুলে ধরেন তিনি। পাশাপাশি ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তিদেরকে দক্ষ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের নানামুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং তাদের কাজের প্রচার এর কথা বলেন।
কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারপার্সন তাওহিদা জাহান বলেন, বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস হিসেবে বছরের ২১ মার্চ একটি উল্লেখযোগ্য দিন। ২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘের ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালন করা শুরু হয়। ডাউন সিনড্রোম বিষয়ে বৈশ্বিক সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ার একটি উপলক্ষ্য হিসেবে এ দিবসটি অধিকতর গুরুত্বের দাবিদার। আর এ দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সচেতনতা ও জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের এ উদ্যোগ।
ডাউন সিনড্রোম কোন রোগ নয়, বরং মানবদেহের ক্রোমোজোমঘটিত জ্বীনতাত্ত্বিক একটি বিশেষ অবস্থা যার ফলে জন্ম থেকেই একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিশেষত্ব লক্ষ করা যায়। এদের মাঝে মঙ্গোলীয় চেহারা, নরম পেশী, হাত ও জিহ্বার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। এছাড়া মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ঘাটতিও রয়েছে। মূলত উন্নয়নের মাইলফলকগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু দেরীতে আয়ত্ত্ব করার ফলে সাধারণ শিশুদের থেকে এরা পিছিয়ে থাকে। কথা বলা, ভাষা, পড়াশুনা, আচরণসহ নানা ক্ষেত্রে বিশেষ ঘাটতি চোখে পড়ে। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা, যত্ন ও শিক্ষার মাধ্যমে তাদের ঘাটতি অনেকাংশেই লাঘব করা সম্ভব। এক্ষেত্রে পিতামাতা, পরিবার, দায়িত্বশীল শিক্ষক ও চিকিৎসকসহ সমাজের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।
কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এ বছর বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবসের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে “CONNECT” । ২০২০ সালে নতুন প্রেক্ষাপটে বিকল্প উপায়ে সকলকে সংযুক্ত থাকতে হয়েছে। কোভিড-১৯ সারা বিশ্বের সকলের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ যার ফলে ডাউন সিনড্রোম শিশুরা অনেকাংশে মূলধারা থেকে পিছিয়ে পড়েছে। বিকল্প উপায়ে যোগাযোগ ও সংযুক্তির মাধ্যমে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কিছুটা হলেও অব্যাহত আছে। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তিদেরকে অন্যদের সাথে যোগাযোগ ও সমতার ভিত্তিতে সংযুক্তির মাধ্যমে সচেতনতা ও সঠিক জ্ঞান মানুষের মাঝে ব্যাপ্ত করে দেশ বিদেশের সকল ডাউন সিনড্রোম শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিগণ তাদের সঠিক প্রাপ্য অধিকারের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় অংশগ্রহণ করবে এই কামনা করেন ওয়েবিনারে উপস্থিত সকল অতিথিবৃন্দ।