ইতিহাসের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশকে সঠিক পথে পরিচালনার দুর্লভ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে--প্রধান বিচারপতি
সকল রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে ঢাবিকে সর্বজনীন জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই--ঢাবি উপাচার্য
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতার আলোকে ইতিহাসের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালনা এবং দেশকে ঢেলে সাজানোর একটি দুর্লভ ও সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। এই সযোগ কাজে লাগাতে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। নতুন বাংলাদেশে গণমানুষের যে আশা-আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়বো। আজ ০২ মে ২০২৫ শুক্রবার ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের দু’দিনব্যাপী ১৪তম দ্বি-বার্ষিক আন্তর্জাতিক ইতিহাস সম্মেলন ও সাধারণ সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে বলেন, সকল রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বজনীন ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের দু’দিনব্যাপী ১৪তম দ্বি-বার্ষিক আন্তর্জাতিক ইতিহাস সম্মেলন ও সাধারণ সভা আজ ০২ মে ২০২৫ শুক্রবার ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে শুরু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। (ছবি: ঢাবি জনসংযোগ)
বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পরিষদের যুগ্মসম্পাদক অধ্যাপক ড. সুরাইয়া আক্তার। যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ কে এম খাদেমুল হক অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছি। দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। বিচারপ্রার্থী ও সংশ্লিষ্টরা ইতোমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছেন। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে ইতোমধ্যে অধ্যাদেশ প্রণীত হয়েছে। এই অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সুপ্রীম জুডিশিয়াল অ্যাপোয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের মাধ্যমে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, উচ্চ আদালতে বিচারক অপসারণে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও বিচার প্রক্রিয়া সহজীকরণের বার্তা নিয়ে আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিহাস যে কোন জাতির আত্মপরিচয়ের ধারক। একটি জাতির অতীতের চেতনা, সফলতা ও আত্মত্যাগ সবকিছু ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকে। একারণে ইতিহাস আমাদের পথচলার দিকনির্দেশক ও ভবিষ্যত নির্মাণের প্রেরণা। ইতিহাস শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়, ইতিহাস ছড়িয়ে আছে সংগ্রহশালায়, দলিলে, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনে, স্থাপত্যে, বিভিন্ন গ্রন্থে ও স্মারকে। ইতিহাসের মূল্যবান উপকরণ সংরক্ষণ শুধুমাত্র ইতিহাসবিদদের একার কাজ নয়। এক্ষেত্রে আমাদের নাগরিক দায়িত্ব রয়েছে। সমষ্টিগতভাবে এই দায়িত্ব পালনে আমরা ব্যর্থ হলে অনেক ঐতিহাসিক দলিল, নিদর্শন ও স্মারক সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে যাবে। তাই ইতিহাস সংরক্ষণে প্রত্যেক সচেতন নাগরিককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ইতিহাসের মূল্যবান উপকরণসমূহ সাধারণ মানুষের বোধগম্য করতে মাতৃভাষায় ইতিহাস চর্চার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, তত্ত্ব ও বাস্তবতার মেলবন্ধন ঘটানোর লক্ষ্যে আমরা একাডেমিয়া ও পেশাজীবীদের মধ্যে সম্পর্ক জিইয়ে রাখতে চাই। আমরা সমাজের সকল অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে একটি সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনির্ভরতা অর্জন ও সামগ্রিক উন্নয়নে এই সর্বজনীন প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
১৪৩০ ও ১৪৩১ বাংলা বর্ষে ইতিহাস বিষয়ে প্রকাশিত সেরা গ্রন্থের জন্য ৩জনকে ‘বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ পুস্তক সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বশির আহম্মেদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক এটিএম রফিকুল ইসলাম এবং বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা মামুন সিদ্দিকী। দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের ১৮টি পর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকগণ ইতিহাস বিষয়ক প্রায় ১’শটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।
০২/০৫/২০২৫
(মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম)
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়