বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিলের মরদেহে গতকাল ২২ জুলাই ২০১৬ শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে উপাচার্য তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থেকে আন্দোলন করেছিলেন শিরিন বানু মিতিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্র রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট মিতিল ছেলেদের পোশাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। প্রগতিশীল নারী আন্দোলনে, সামাজিক আন্দোলনে সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিচারের দাবিতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন শিরিন বানু মিতিল। তিনি ছিলেন উন্নয়ন সংগঠক। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকার জন্য তিনি কিংবদন্তিতে পরিণত হন।
উপাচার্য তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর পরিবারের শোক-সন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
শিরিন বানু মিতিল ১৯৫০ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। মা সেলিনা বানু পাবনা জেলার ন্যাপের সভানেত্রী এবং যুক্তফ্রন্টের এমপি ছিলেন। বাবা খোন্দকার শাহজাহান মোহাম্মদ ছাত্রজীবন থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরিবারের রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার সূত্রে স্কুলজীবনেই ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন তিনি। একাত্তরে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভানেত্রী এবং কিছু সময়ের জন্য পাবনা জেলা মহিলা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদিকা ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাবনা পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ যুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে পুরুষবেশে অংশ নেন। পাবনা টেলিফোন এক্সচেঞ্জে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে জনতার যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে তিনি অংশ নেন। যুদ্ধে ৩৬ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং দু’জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ এপ্রিল নগরবাড়ীতে যুদ্ধের সময় পাবনার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তিনি ভারতে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত নারীদের একমাত্র প্রশিক্ষণ শিবির ‘গোবরা ক্যাম্প’-এ যোগ দিয়েছিলেন। পরে মেজর জলিলের নেতৃত্বাধীন ৯ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে সোভিয়েত রাশিয়ায় পড়াশোনা করতে যান মিতিল। সেখানকার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশুনা শেষে ১৯৮০ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
নারীমুক্তি আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি স্টেপসের সাময়িকী ‘উন্নয়ন পদক্ষেপ’-এর সম্পাদকমÐলীর সদস্য ছিলেন। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, খেলাঘর প্রভৃতি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনে ও কর্মকাÐে সক্রিয় ছিলেন আমৃত্যু।
উল্লেখ্য, শিরিন বানু মিতিল গত ২০ জুলাই ২০১৬ বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদুল জামিয়ায় প্রথম জানাজা এবং কুমিল্লায় দ্বিতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
------------------
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়