বামপন্থী আন্দোলনের প্রবীণ নেতা বিশিষ্ট লেখক, বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র অজয় রায়-এর মৃত্যুতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এক শোকবাণীতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলন, সংগ্রাম সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং এক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব অজয় রায়ের মৃত্যুতে বাংলাদেশের সামাজিক আন্দোলনের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল এবং প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তাঁর অবদান দেশবাসী স্মরণ রাখবে।
উপাচার্য মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর পরিবারের শোক-সন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
অজয় রায়ের জন্ম ১৯২৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। তাদের পারিবারিক বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বনগ্রামে। অজয় রায়ের শৈশবকাল কেটেছে ভারতের বারানসী শহরে। তাঁর পিতা ড. প্রমথ নাথ রায় বারানসী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ভাষার অধ্যাপক ছিলেন। তিনি বারানসী এ্যাংলো বেঙ্গলী ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৫ সালে বারানসী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইএসসি পাস করেন। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তিনি বারানসী থেকে কিশোরগঞ্জে চলে আসেন। ১৯৪৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কারিক্যুলাম অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজে থেকে বি কম পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরবর্তীকালে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন, পহেলা বৈশাখ উদযাপন, মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রচলন, উদীচী, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি কালজয়ী কার্যক্রমের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে।
তাঁর উল্লেখযোগ্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি’, ‘ঊষালগ্ন’, ‘শিক্ষানবিশীর হাতেখড়ি’, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি : অতীত ও বর্তমান’, ‘বাংলাদেশের ভূমিব্যবস্থার সংকট ও সমাধান’, ‘রাজনীতির অ আ ক খ’, ‘রাজনীতি কি ও কেন?’, ‘বাংলার কৃষক বিদ্রোহ’, ‘গণআন্দোলনের এক দশক’, ‘আমাদের জাতীয় বিকাশের ধারা’, ‘বাংলাদেশের বামপন্থী আন্দোলন’, ‘পুঁজিবাদী অর্থনীতি’, ‘সত্যেন সেন’, ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’, ‘বাঙলা ও বাঙালী’, ‘বাঙলা বাঙালি বাঙলাদেশী’, ‘তীরের অন্বেষায় : স্বাধীন বাংলাদেশ’ ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, অজয় রায় আজ ১৭ অক্টোবর ২০১৬ সোমবার ভোরে নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়ে, এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সন্তানেরা দেশে ফেরার পর আগামী ১৯ অক্টোবর ২০১৬ বুধবার তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
--------------
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়