১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রি স্মরণে নানা আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল ২৫ মার্চ ২০১৮ রবিবার ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই এসোসিয়েশন, বিভিন্ন হল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে সন্ধ্যা ৭টায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, ৭টা ৫ মিনিটে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং ৭টা ২০ মিনিটে আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামান।

আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদসহ বিশেষত ২৫ মার্চের শহীদদের স্মরণ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক চরিত্রকে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের বৈষম্য ও নিপীড়ন নিয়ে লেখায় এবং কথায় তারা উজ্জ্বীবিত করেছিলেন আমাদের। সেই চেতনার বিকাশ ঘটেছিল বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। সে কারণেই তারা পাকিস্তানিদের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। সেই সব পূর্বসূরিদের চেতনাকে ধারণ করে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে আমরা আলোর পথে যাত্রার আহ্বান জানাই। উপাচার্য আরও বলেন,  পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে নারকীয় গণহত্যা চালালেও এখন পর্যন্ত এই দিনটি দীর্ঘদিন শুধুমাত্র কালরাত হিসেবে পালন করা হয়। জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে এই দিবসটিকে পালন করা হচ্ছে কিন্তু গণহত্যা সংশ্লিষ্ট সকল ধরনের বিষয় ও উপাদান থাকলেও এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ দিবসটিকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দেয়নি। তিনি জোরালোভাবে দিবসটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি প্রদানের দাবি উত্থাপন করেন।

বা’দ জোহর মসজিদুল জামিয়ায় ২৫ মার্চের রাতে নিহতদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত এবং বিশ^বিদ্যালয় এলাকার অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ প্রার্থনা সভা। রাত ৯টা থেকে ৯:০১টা পর্যন্ত  ২৫ মার্চ কালরাত স্মরণে জরুরি স্থাপনা ব্যতীত সকল জায়গায় “ব্লাক-আউট” কর্মসূচি পালন করা হয়। 

জগন্নাথ হল ও রোকেয়া হলে নিহতদের স্মরণ : ২৫ মার্চ কালরাতে নিহত শহীদদের স্মরণে জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হল কর্তৃপক্ষ। এতে পধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. অসীম সরকার।

দিবসটি পালন উপলক্ষে রোকেয়া হলের অভ্যন্তরে যে সব নারী ও কর্মচারী পাকিস্তানি সামারিক বাহিনীর নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন সে সব বীর নারী ও শহীদ কর্মচারীদের স্মরণে প্রথমবারের মতো রাত ৮টায় রোকেয়া হল পরিবার এক স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এসময় হলের প্রাধ্যক্ষা অধ্যাপক ড. জিনাত হুদাসহ আবাসিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়াও বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের উদ্যোগে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ শীর্ষক এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
--------------
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
 জনসংযোগ দফতর
 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়